ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সঠিক পদ্ধতি - কোরবানির ঈদ

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সঠিক পদ্ধতি - কোরবানির ঈদ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি হল ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি হলো ঈদুল আজহা। এই ঈদুল আজহাকে অনেকেই কোরবানির ঈদও বলে থাকেন। প্রতি বছর আরবি হিজরী সনের জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ এই ঈদুল আজহা পালিত হয়।
ঈদুল-আজহার-নামাজের-নিয়ম-নিয়ত
ঈদুল-আজহার-নামাজের-নিয়ম-নিয়ত। ছবি - এআই
ঈদুল ফিতর নামাজের দুই মাস দশ দিন পর ঈদুল আজহা পালন করা হয়। ঈদুল আজহা নামাজের পর ধর্ম প্রাণ মুসলমানগন হালাল পশু কোরবানি করে থাকেন। এই পশু কোরবানি করার জন্য ঈদুল আজহা কে কোরবানির ঈদ বলা হয়। প্রায় দীর্ঘ এক বছর পর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ মুসলমানদের নিকট ফিরে আসে তাই অনেকেই ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম ভুলে যান। তাই পাঠকদের সুবিধার্থে ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সঠিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদের শাব্দিক অর্থ হল 'বারবার ফিরে আসা'। আর 'ঈদুল আজহা' মূলত আরবি শব্দ এর অর্থ হল 'ত্যাগের উৎসব' বা 'উৎসর্গের উৎসব'। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরে (মতান্তরে, ১২ তাকবির) আদায় করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব (মতান্তরে সুন্নতে মুয়াক্কাদা)। ঈদের নামাজ ছাদ বিহীন খোলা জায়গায় জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাঃ তাঁর জীবদ্দশায় খোলা জায়গায় জামাতের সঙ্গে  ঈদের নামাজ আদায় করতেন। যদি খোলা স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া জায়েজ আছে। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদুল হারামে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ পড়া যায়। (বুখারী, ১/১৩১; ফতোয়া শামি, ১/৫৫৫, ১/৫৫৭; আল মুহাজ্জাব, ১/৩৮৮)

ঈদুল আজহার দিনে মুসলমান সম্প্রদায় ফজর নামাজের পর ভোরে ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদুল আজহার ওয়াজিব (মতান্তরে, সুন্নতে মুয়াক্কাদা) নামাজ আদায় করেন। তারপর তারা হালাল পশু মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, 
'অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো'। (সূরা আল কাউসার, আয়াত নং ২)
ঈদুল-আজহার-নামাজের-নিয়ম
ঈদুল-আজহার-নামাজের-নিয়ম। ছবি - এআই
বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে ঈদুল ফিতর নামাজের মত ঈদুল আজহার নামাজেরও দুটি নিয়ম পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। ঈদুল আজহার নামাজের এই দুটি নিয়মের মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে দুটি পদ্ধতিই তুলে ধরব ইনশাল্লাহ।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম প্রথম পদ্ধতি -  ১২  তাকবিরে

ঈদুল আজহার নামাজ দুই রাকাত। এই নামাজে আজান-ইকামত নেই। জুমার নামাজের মতই উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে হয়। সহিহ হাদিস অনুযায়ী ঈদুল আজহার ২ রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং তা অতিরিক্ত ১২ (প্রথম রাকাতে ৭ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ৫) তাকবিরে আদায় করা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাঃ, তাঁর সাহাবীগণ, তাবাঈ ও তাবা তাবাঈগণ সকলেই ১২ তাকবিরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। (সহিহ হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা মালিক, মুসনাদে আহমদ, মুয়াত্তা মুহাম্মদ, বায়হাকি ও তাবারানী)

হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে, 'রাসূলুল্লাহ সাঃ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সালাতে প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৭ টি তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৫ টি তাকবির পাঠ করতেন'। (আবু দাউদ: হাদিস নং ১০১৮)

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সময়ে ঈদগাহে যাওয়ার সময় একটি লাঠি বা বল্লম নিয়ে যাওয়া হতো এবং ঈদের সালাত শুরুর আগেই সেটা তাঁর সামনে 'সুতরা' হিসেবে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হতো। (বুখারী, পৃষ্ঠা নং ১৩৩) প্রিয় পাঠক চলুন, ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

প্রথম রাকাত ৭ তাকবির

১। রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রথমেই ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত করে 'আল্লাহু আকবার' উচ্চারণ করে তাকবিরে তাহরীমা বলে বাম হাতের উপর ডান হাত বাঁধতেন।
২। এরপর তিনি সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস মুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা) পড়তেন। (ইবনে খুযাইমা)

৩। সানা পাড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়ার পূর্বেই রাসুলুল্লাহ সাঃ একের পর এক 'আল্লাহু আকবার' বলে অতিরিক্ত ৭ তাকবির দিতেন।
৪। প্রতি দু তাকবিরের মাঝখানে তিনি একটুখানি (৩ তাসবিহ সময়) চুপ থাকতেন।

৫। তিনি প্রত্যেক তাকবিরের সাথে দুই হাত তুলতেন এবং প্রত্যেক তাকবিরের পর আবার হাত বেঁধে ফেলতেন। (বায়হাকী)
৬। এইভাবে ৭ টি তাকবির বলার পর রাসূলুল্লাহ সাঃ সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করতেন।

৭। অতঃপর তিনি আরেকটি সূরা (প্রথম রাকাতে সূরা আ'লা অথবা সূরা কাফ) মিলিয়ে পড়তেন। (মুসলিম: ৮৯১; এভাবে পড়া মুস্তাহাব)
৮। এভাবে তিনি যথারীতি রুকু-সিজদা আদায় করে প্রথম রাকাত শেষ করতেন।

দ্বিতীয় রাকাত ৫ তাকবির

১। রাসুলুল্লাহ সাঃ প্রথম রাকাত সম্পন্ন করার পর সিজদা থেকে উঠে সূরা ফাতিহা শুরু করার পূর্বেই পরপর অতিরিক্ত ৫ টি তাকবির দিতেন।
২। প্রতি দু তাকবিরের মাঝখানে তিনি একটুখানি (৩ তাসবিহ সময়) চুপ থাকতেন।

৩। তিনি প্রত্যেক তাকবিরের সাথে দুই হাত তুলতেন এবং প্রত্যেক তাকবিরের পর আবার হাত বেঁধে ফেলতেন। (বায়হাকী)
৪। এভাবে ৫ টি তাকবির বলার পর সূরা ফাতিহা পড়তেন।

৫। সূরা ফাতেহা পড়ার পর তিনি আরেকটি সূরা (দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাছিয়া বা সূরা কামার) মিলিয়ে পড়তেন। (মুসলিম: ৮৯১; এভাবে পড়া মুস্তাহাব)
৬। এরপর তিনি যথারীতি রুকু ও সিজদা আদায় করতেন

৭। বৈঠকে বসে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু), দুরুদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন করতেন।

ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন করার পর তিনি একটি তীরের ওপর ভর দিয়ে জমিনে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তখন ঈদগাহে কোন মিম্বার নেওয়া হত না। তিনি কোরবানি সংক্রান্ত যেমন - কোরবানির গোশত বন্টনসহ নানা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিতেন। সবশেষে তিনি মুসলিম উম্মাহসহ সারা বিশ্বের জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করে ঈদুল আজহার নামাজ সমাপ্ত করতেন। 

অধিকাংশ বিজ্ঞ আলেম ১২ তাকবিরের মাসআলা কে বেশি শক্তিশালী বলেছেন। তাছাড়া হানাফী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অনুসারী দুই ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ) এই মাসআলার উপর আমল করেছেন। হানাফী মাযহাব ব্যতীত বাকী ৩ মালেকী, শাফিঈ, হাম্বলী মাযহাব ও আহলে হাদিসের লোকেরা এবং মক্কা ও মদিনার ইমামগণ এইভাবে অতিরিক্ত ১২ তাকবিরে ঈদের সালাত আদায় করে থাকেন। (রাদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা নং ৬৬৪)

আশা করি আপনারা ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।
ঈদুল-আজহার-নামাজের-নিয়ম
ঈদুল-আজহার-নামাজের-নিয়ম। ছবি - এআই

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম দ্বিতীয় পদ্ধতি - ৬ তাকবিরে

এই পদ্ধতিতে ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব এবং অতিরিক্ত ৬ তাকবির বিশিষ্ট। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদুল আজহার নামাজও ওয়াজিব। ঈদুল আজহার নামাজে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজের নিয়ত করে প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বাঁধার পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দিতে হয়। দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত শেষ হলে রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই আবারও অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দিতে হয় এবং চতুর্থ তাকবির দিয়ে রুকুতে যেতে হয়। প্রিয় পাঠক চলুন, প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

প্রথম রাকাত ৩ তাকবির

১। নবী করিম সাঃ ঈদুল ফিতর সালাতের নিয়ত করে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধতেন।
২। এরপর তিনি সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস মুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা) পড়তেন। (ইবনে খুযাইমা)

৩। সানা পড়ার পর সূরা ফাতিহা তেলাওয়াতের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাঃ একের পর এক 'আল্লাহু আকবার' বলে অতিরিক্ত ৩ টি তাকবির দিতেন।
৪। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ সময় পরিমাণ বিরত থাকতেন।

৫। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতেন।
৬। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবীরে তাহরিমার মত বেঁধে নিতেন।

৭। তারপর আউযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।
৮। সূরা ফাতেহা পাঠের পর অন্যান্য সূরা মিলাতেন।
৯। তারপর নিয়মিত নামাজের মত রুকু ও সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করতেন।

দ্বিতীয় রাকাত ৩ তাকবির

১। প্রথম রাকাত শেষ করে পুনরায় দাঁড়াতেন এবং সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।
২। তারপর যেকোনো একটি সূরা মিলিয়ে পড়তেন।

৩। সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ টি তাকবীর দিতেন।
৪। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতেন।

৫। তৃতীয় তাকবীর দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মত বেঁধে দিতেন।
৬। তারপর রুকুর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে রুকুতে যেতেন।

৭। এরপর সিজদা আদায় করতেন।
৮। বৈঠকে বসে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু), দুরুদ শরীফ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন করতেন।

৯। তারপর নবী করিম সাঃ ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন করে মিম্বরে উঠতেন এবং দুটি খুতবা দিতেন। এ সময় মুসল্লিগণ মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতেন।
১০। মুসলমানদের জন্য ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও কোরবানি সংক্রান্ত খুতবা শেষে মুসলিম বিশ্বের জন্য এবং সকল মানুষের জন্য বিশেষ দোয়া করে ঈদগাহ ত্যাগ করতেন।

অতিরিক্ত ৬ তাকবিরে ঈদের সালাত আদায় করা হানাফী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মত। তাই হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত ৬ তাকবিরে ঈদের সালাত আদায় করে থাকেন।

আশা করি আপনারা ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হল ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ইসলামে নিয়ত খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা যে কোন কর্মের ফলাফল তার নিয়তের উপর নির্ভর করে। নিয়ত অর্থ হল 'মনের ইচ্ছা' সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি একান্তই বান্দার গোপনীয় বা অন্তরের বিষয়। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোন কাজের শুরুতেই মনের মধ্যে যে ইচ্ছে পোষণ করা হয় সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত বাংলা এবং আরবি দুটোতেই করা যায়। অনেকেই ঈদের সালাতের আরবীতে নিয়ত করে থাকেন।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত আরবিতে:
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا
الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উছালিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাত সালাতুল ঈদিল আজহা মাআ সিত্তাতিত তাকবীরাতি  ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতা ওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত বাংলা অর্থ:
আমি ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কিবলামূখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি - আল্লাহু আকবার।
(আপনারা যারা ১২ তাকবিরে ঈদুল আজহার ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করে থাকেন, তারা সেইভাবে '১২ তাকবির' এবং 'সুন্নতে মুয়াক্কাদা' উল্লেখ করে বাংলায় নিয়ত করে নিলেও হবে।)

ঈদুল আজহার নামাজের তাকবির

اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
এই তাসবিহটি জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ ভোর থেকে ১২ তারিখ আসর পর্যন্ত পড়া সুন্নত।

ঈদুল আজহার দিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব

১। ঈদের দিন ভোরে প্রথমেই মিসওয়াক করা সুন্নত।
২। তারপর উত্তম রূপে গোসল করা সুন্নত।
৩। সাধ্যমত উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব।

৪। সুগন্ধি, আতর ব্যবহার করা সুন্নত।
৫। ঈদুল আজহায় কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে যাওয়া সুন্নত।
৬। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা মুস্তাহাব।

৭। ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচু স্বরে তাসবিহ-তাহলিল (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত।
৮। ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সাথে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মুস্তাহাব।

৯। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে সামর্থ্য অনুযায়ী হালাল পশু কোরবানি করা।
১০। ঈদের আনন্দ অভিবাদন বিনিময় করা মুস্তাহাব।
(বুখারী: ১/১৩০; ইবনে মাজাহ: ৯২; ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮; হেদায়া: ২/৭১)

বন্ধু-বান্ধব, নিকটাত্মীয় ও পরিচিত কারো সঙ্গে কিছুদিন বা অনেকদিন পর দেখা হলে উভয় ডান গলা মিলিয়ে মহব্বতের সঙ্গে একবার কোলাকুলি করা এবং 'আল্লাহুম্মা জিদ মহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিল্লাহ' পড়া সুন্নত। তবে শুধুমাত্র ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় কোলাকুলি করা জায়েজ আছে। (তিরমিজি: ২/১০২; মাহমুদিয়া: ২৮/২১১; ইসলাহি খুতুবাত: ১/১৮৬-১৮৭)
আরো পড়ুন: 

সর্বশেষ কথা - ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুটি উৎসব হল ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। প্রতিবছর আরবি হিজরী সনের জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালিত হয়। ঈদুল আজহার নামাজ অতিরিক্ত ১২ তাকবির (মতান্তরে ৬ তাকবির) এ সুন্নতে মুয়াক্কাদা (মতান্তরে ওয়াজিব) নামাজ আদায় করা হয়। সঠিক কথা হচ্ছে ৬ ও ১২ তাকবীর উভয় পদ্ধতিই বৈধ। যেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হোক না কেন, সুন্নাহ আদায় হয়ে যাবে। এখানে কোন পক্ষের গোঁড়ামী ও বিভেদ করার কোন সুযোগ নেই। নামাজ শেষে খুতবা শোনার পর মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী হালাল পশু যেমন - গরু, ছাগল, উট, দুম্বা ইত্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করে থাকেন। কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে খাওয়া উত্তম। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈদুল আজহার শিক্ষা সবার জীবনে নেয়ামত দান করুন - আমীন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url