কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান জেনে রাখুন

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান। কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। পূর্বে এই জেলা চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম জেলাকে ভেঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান । ছবি- Google 
কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের একটি নান্দনিক ও দর্শনীয় জেলা। রাজধানী ঢাকা থেকে এই জেলার দূরত্ব প্রায় ৪০২ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার। আজকে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যে ভরপুর কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা দশটি স্থান সম্পর্কে জেনে নেব।

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান

কক্সবাজারের প্রাচীন নাম ছিল পালংকী। একসময় এটি প্যানোয়া নামে পরিচিত ছিল। প্যানোয়া শব্দটির অর্থ হলো হলুদ ফুল। সেই সময় কক্সবাজার ও এর আশেপাশের এলাকাগুলো হলুদ ফুলে ঝকমক করত। সেই থেকে প্যানোয়া নামটি পরিচিতি লাভ করে। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে একজন ইংরেজ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এখানে একটি বাজার স্থাপন করেন। কক্স সাহেবের বাজার থেকে 'কক্সবাজার' নামের উৎপত্তি হয়।

কক্সবাজারে রয়েছে সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি। সেখানে গেলে যে কারো সকাল-বিকাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়াতে মন চাইবে। সমুদ্রের বিশাল নীল জলরাশি আর সোঁ সোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নামই হল কক্সবাজার। অপরূপ সুন্দর বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে রয়েছে। এছাড়াও এখানে আরো অনেক দর্শণীয় স্থান ও স্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন পাহাড়ি উপজাতি ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসের বৈচিত্র্যময় এই জেলার জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান হল-
১। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
২। সেন্টমার্টিন
৩। মহেশখালী দ্বীপ
৪। রামু বৌদ্ধ বিহার
৫। হিমছড়ি
৬। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
৭। রামু রাবার বাগান
৮। মাথিনের কূপ
৯। আদিনাথ মন্দির
১০। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক।
এবার আমরা উপরে উল্লেখিত জনপ্রিয় দর্শণীয় স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেব।

১। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (Cox'sbazar Sea Beach)

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হলো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অখণ্ড এ সমুদ্র সৈকত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উত্তাল ঢেউ আর মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে অবিরাম। প্রায় সারা বছর ধরে লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করে থাকেন। আপনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যেতে পারবেন খুব সহজেই।
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান। ছবি- Google 
কক্সবাজার জেলা পাহাড়, নদী, সমুদ্র, অরণ্য ও উপত্যকা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্যান্য জেলা থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান লক্ষ্য করা যায়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি হওয়ায় আপনি এগুলো খুব সহজেই দেখে নিতে পারেন। যেমন-

সমুদ্র সৈকত

ক. সুগন্ধা বিচ
খ. লাবনী পয়েন্ট
গ. ইনানী সমুদ্র সৈকত

পর্যটন পার্ক

ক. নাফ পর্যটন পার্ক, টেকনাফ
খ. সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ
গ. নিভৃতে নিসর্গ পার্ক, চকরিয়া

বনাঞ্চল

ক. হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান
খ. মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান
গ. ইনানী জাতীয় উদ্যান
ঘ. টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
ঙ. ফাসিয়াখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

গুহা/সুড়ঙ্গ

ক. কুদুম গুহা, টেকনাফ
খ. কানা রাজার সুরঙ্গ, রামু

ধর্মীয় স্থাপনা

ক. বদর মোকাম জামে মসজিদ
খ. রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার
গ. রামু জামে মসজিদ, সেনানিবাস

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

ক. কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ: দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার
খ. বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট
গ. রামু সেনানিবাস
ঘ. কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন
ঙ. কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
চ. বার্মিজ মার্কেট
ছ. রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড।
উপরে উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলো আপনি স্থানীয় লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করে বা তথ্য জেনে এক নজর দেখে নিতে পারেন।

২। সেন্টমার্টিন (Saint Martin)

সেন্ট মার্টিন হলো বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্বদক্ষিণে সমুদ্রের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ। মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পূর্বে এই দ্বীপটিকে নারকেল জিনজিরা বলে ডাকা হতো। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে একজন ব্রিটিশ খ্রিস্টান 'সেন্ট মার্টিন' (Saint Martin) এর নাম অনুসারে এই দ্বীপটির নাম হয় সেন্ট মার্টিন। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত ও জৈব বৈচিত্র্যে ভরপুর সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পর্যটকদের হৃদয় দখল করে নিয়েছে। অবারিত নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলরাশির মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ ও শামুক-ঝিনুক সহ নানা প্রজাতির মাছ, পাখি এই দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণ পিয়াসী পর্যটকদের দুর্নিবার আকর্ষণে বারবার কাছে টেনে নেয়।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আপনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ এর 'সমুদ্র বিলাস' নামে তার একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্র দেখতে পাবেন। আর এই দ্বীপের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা গুলোর একটি হলো পশ্চিম বিচ। বিকেলবেলা গোধূলি ঈষৎ কমলা রঙের সূর্যের সমুদ্রের বিশাল নীল জলে ঢলে পড়া সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন এই পশ্চিম বিচ থেকেই। অবশ্য আপনি যদি সকালের সূর্যোদয় দেখতে চান, তাহলে আপনাকে এই দ্বীপের পূর্ব বিচে গিয়ে দেখতে হবে। তাছাড়া এই দ্বীপের অদূরে ছেঁড়া দ্বীপ আপনি যে কোন একটা সকাল বা বিকেলে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন।
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান। ছবি- Google 
আর আপনি যদি সংগীত অনুরাগী হয়ে থাকেন তাহলে সেখানে এক রাত অবস্থান করে বারবি-কিউ মাছ ভাজা খেতে খেতে ব্যান্ডের তালে তালে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে সন্ধ্যা উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া আপনি সামুদ্রিক কাঁকড়া ভাজা খেতে পারেন। অবশ্য কাঁকড়া, চিংড়ি খাওয়া ইসলাম ধর্মে মকরূহ। অর্থাৎ আপনার যদি রুচিতে হয় তাহলে কাঁকড়া, চিংড়ি খাওয়া হালাল নতুবা এগুলো খাওয়া ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম। আর হ্যাঁ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় ডাবের পানি বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। তাই সেখানে ডাব খেতে বলবেন না। সুতরাং কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি একটি দর্শনীয় স্থান।

৩। মহেশখালী দ্বীপ

মহেশখালী উপজেলা হলো কক্সবাজার জেলার একটি পাহাড়ি দ্বীপ। তাছাড়া মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে এই দ্বীপের দূরত্ব হলো মাত্র ১২ কিলোমিটার। শোনা যায়, ১৫৫৯ সালের এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি ও ধলাঘাটা নামে তিনটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। এখানকার পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদনে সমগ্র বাংলাদেশে এই উপজেলা মহেশখালীর সুনাম রয়েছে। কক্সবাজার থেকে চার পাঁচ ঘন্টা সময় ব্যয় করলে আপনি মহেশখালী দ্বীপ থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত মহেশখালী দ্বীপে রয়েছে আদিনাথ মন্দির, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি তীর্থস্থান। এই মন্দিরের কারুকার্য এখানে আসা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। তাছাড়া এখানে বৌদ্ধ বিহার, জলাবন, রাখাইনপাড়া ও স্বর্ণ মন্দির রয়েছে। এখানকার পান গাছের বরজ এবং লবণের মাঠ যে কাউকে আকৃষ্ট করে। এই দ্বীপের মিষ্টি পান, শুটকি, মাছ, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তা উৎপাদনে সারা বাংলাদেশে এর সুনাম রয়েছে। তাছাড়া মহেশখালী পানের সুনাম সারাদেশব্যাপী রয়েছে। মহেশখালী পান নিয়ে একটি রোমান্টিক গান প্রচলিত রয়েছে-

"যদি একটা সুন্দর মন পাইতাম,
তাহলে, মহেশখালীর পানের খিলি
তারে আমি বানাইয়া খাওয়াইতাম"।

সুতরাং আপনি যদি মহেশখালি দ্বীপ ভ্রমণে যান, তাহলে মিষ্টি পান খেতে ভুলবেন না। আর সময় একটু হাতে থাকলে আপনি মহেশখালী দ্বীপের ঝাউবাগান এবং চরপাড়া বিচ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান। ছবি- Google 

৪। রামু বৌদ্ধ বিহার

রামু উপজেলা হল কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ রামুতে রয়েছে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। এখানে সর্বমোট ৩৫ টি ছোট-বড় বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে। রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড় চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। আর তার কিছু দূরে অর্থাৎ দুই কিলোমিটার দূর এই কেন্দ্রীয় সীমা বিহার নতুন করে নির্মিত হয়েছে। আর কিছুটা দক্ষিনে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন নজর কারা লালচিং এবং সাদাচিং বৌদ্ধবিহার।

রামু বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও এখানে অনেক কিছুই দেখার রয়েছে। এখানে ঐতিহ্যবাহী ও উল্লেখযোগ্য মন্দির ও বিহার গুলো হলো উত্তর মিঠাছড়ি ১০০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তি, রামু সীমা বিহার, লামারপাড়া বৌদ্ধবিহার, রাংকুট বৌদ্ধবিহার, শ্রী শ্রী রামকোট তীর্থ ধাম এবং শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি। আর পাশেই রামু রাবার বাগান সহজেই ঘুরে নিতে পারেন। তাছাড়া এখানে একটি সেনানিবাস এবং অসাধারণ সুন্দর জামে মসজিদ রয়েছে।

৫। হিমছড়ি

হিমছড়ি হল কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত একটি পর্যটন স্থান। যারাই কক্সবাজার ঘুরতে যান, তারা অবশ্যই হিমছড়ি ঘুরে আসেন। হিমছড়ির ছোট-বড় ঝর্ণা, পাহাড় আর ফটোগ্রাফিক সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের বিমোহিত করে। এখানে পাহাড়ে ওঠার জন্য কর্তৃপক্ষ সিঁড়ির ব্যবস্থা করেছেন। এখানে সামনেই একটি শীতল পানের ঝর্ণা চোখে পড়বে। আর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার রাস্তা মেরিন ড্রাইভের পাশেই এই হিমছড়ি অবস্থিত। এখান থেকেও বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত চোখে পড়বে। বছরের যে কোন সময় হিমছড়ি যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে এর ঝর্ণা গুলো পূর্ণতা লাভ করে থাকে, তখন দেখতে আরো আকর্ষণীয় মনে হয়।

হিমছড়িতে সরকার পর্যটকদের বিনোদনের জন্য একটি ইকোপার্ক গড়ে তুলেছেন। এই ইকো পার্কে বেশ কিছু ছোট বড় ঝর্ণা, প্রাকৃতিক নিসর্গ, বিস্তীর্ণ পাহাড়ি বনাঞ্চল, আর সমুদ্র সৈকত, সাথে মেরিন ড্রাইভ রোড উপভোগ করা যায়। এখানকার পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে যে কেউ সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন। এছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে ইকো পার্কের প্রবেশ মুখে সুস্বাদু মিষ্টি পানির ডাব, বার্মিজ মার্কেটের বিভিন্ন রকম খেলনা সামগ্রী থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন। এই হিমছড়ি থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে আর একটু সামনে এগুলেই বিখ্যাত ইনানী বিচ দেখতে পাবেন। 

সেখানে বিভিন্ন ছোট-বড় শৈবাল পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ছবি তুলে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন। ইনানী বিচ থেকে দাঁড়িয়ে সূর্যের নীল সাগরের পানিতে হারিয়ে যাওয়ার এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করে। সূর্যাস্তের এই দৃশ্যটি যে কাউকেই মুগ্ধ করবেই করবে। সুতরাং কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি একটি দর্শনীয় স্থান।

৬। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফিস এ্যাকুরিয়াম দেখার সুযোগ। এটি কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত পর্যটকদের বিনোদনের জন্য নতুন সংযোজন একটি ফিস মিউজিয়ামও বলতে পারেন। এই এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে রয়েছে লবণাক্ত ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। এখানে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ সহ হাঙ্গর, পিরানহা, শাপলা পাতা, পান পাতা, কচ্ছপ, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈল, সাগর কুচিয়া, পীতাম্বরী, চেওয়া, জেলিফিশ, আউস, পাঙ্গাস সহ আরো অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী।

এ্যাকুরিয়ামটি ঘুরে দেখতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগতে পারে। এখানে সাগর ও পুকুরের তলদেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ কৃত্রিমভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ্যাকুরিয়ামে ঢুকলে মনে হবে আপনি সাগরের তলদেশে অবস্থান করছেন। আর আপনার চারপাশে খেলা করছে বর্ণীল প্রজাতির নানা রকম মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী। তাই কক্সবাজার ভ্রমণে গেলে এই এ্যাকুরিয়ামটি দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।

৭। রামু রাবার বাগান

ঐতিহ্যবাহী রামু রাবার বাগান কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে অবস্থিত। বর্তমানে রামো রাবার বাগান দেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এই রাবার বাগান ও রাবারের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে রামু রাবার বাগানে ঘুরতে আসেন।

১৯৬০-১৯৬১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহযোগিতায় অনাবাদি জমি গবেষণার মাধ্যমে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। এখানে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়, টিলা ও বিস্তৃত সমতল ভূমির মাঝে বিশাল এলাকা জুড়ে রামু রাবার বাগানের চারপাশে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের হাতছানি। এখানকার রাবার গাছগুলো প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। তারপর গাছগুলোর বয়স ৩২-৩৩ বছর বয়স হলে গাছগুলো অর্থনৈতিকভাবে তার উৎপাদন ক্ষমতা হারায়। রামু রাবার বাগান ও এর আশপাশ খোলামেলা পরিবেশ হওয়ায় ইদানিং পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই আপনি কক্সবাজারে কখনো ভ্রমণে গেলে এই রামু রাবার বাগানটি কোনমতেই মিস করবেন না।

৮। মাথিনের কূপ

মাথিনের কূপ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর তীর ঘেঁষে টেকনাফ থানা চত্বরে অবস্থিত। মাথিনের কূপটি ঘিরে একটি অমর প্রেম কাহিনীর ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ১৮০০ শতকের শেষ ভাগে টেকনাফে তখন পানির অভাব পূরণের জন্য মাত্র একটি সুপেয় পানির কুপ ছিল। থানা প্রাঙ্গণের এই কূপ হতে রাখাইন তরুণীরা প্রতিদিন পানি নিতে আসতো। ধীরাজ ভট্টাচার্য নামে একজন পুলিশ কর্মকর্তা কলকাতা থেকে এই থানায় বদলি হয়ে আসেন। 

সে সময় রাখাইন তরুণীদের সাথে রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনও এখান থেকে পানি নেওয়ার জন্য আসতো। ঘটনা ক্রমে পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের সাথে মাতিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু একদিন হঠাৎ ধীরাজের বাবার অসুস্থতার খবর আসে। তাই ধীরাজকে কলকাতায় ফিরে যেতে হবে কিন্তু মাথিন তাকে যেতে বাধা দেন। মাথিনের মনে ভয় ছিল হয়তো ধীরাজ কলকাতা থেকে আর ফিরে না আসতেও পারেন। কিন্তু ধীরাজ মাথিনকে না জানিয়েই কলকাতা ফিরে যান। ভালবাসার প্রিয় মানুষটা চলে যাবার পর দীর্ঘ সময় প্রহর গুনতে গুনতে অনাহার-অনিদ্রায় নিজের সুন্দর জীবনকে চিরতরে বিসর্জন দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জমিদার কন্যা মাথিন।
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান
কক্সবাজারে-দেখার-জন্য-সেরা-১০টি-স্থান। ছবি- Google 
সেই পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ও রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনের অমর প্রেমের নিদর্শনটিকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সেই কূপটি সংরক্ষণ করে মাথিনের কূপ নামকরণ করেন। ২০০৬ সালে টেকনাফ থানার কর্মকর্তা খালেদ হোসেন ও সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা মাথিনের কূপটি সংস্কার করেন। কালের বিবর্তনে মাথিনের কূপ অমর প্রেম কাহিনীর নিদর্শন হিসাবে সর্বত্র পরিচিতি লাভ করে। হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে পর্যটকরা এই মাথিনের কূপ পরিদর্শন করে থাকেন।

৯। আদিনাথ মন্দির

আদিনাথ মন্দিরটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা মহাদেবের নামানুসারে মন্দিরটির নামকরণ হয়েছে আদিনাথ মন্দির। অন্যদিকে আদিনাথের অন্য নাম হল মহেশ, যা থেকে মহেশখালী নামের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মন্দিরটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রয়েছে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। বর্তমানে এই মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো দুই সম্প্রদায় অর্থাৎ বৌদ্ধদের জন্য একটি বৌদ্ধবিহার এবং মুসলমানদের জন্য রয়েছে একটি মসজিদ। তিন ধর্মের তিনটি উপাসনালয় থাকার কারণে অনেকেই মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকেন। 

মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। প্রতিবছর বাংলা ফাল্গুন মাসে শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ১০-১৫ দিন ব্যাপী বিশেষ মেলা বসে তখন হাজার হাজার পূণ্যার্থী সহ পর্যটকদের সমাগম ঘটে। তাই কখনো কক্সবাজারে ঘুরতে গেলে আদিনাথ মন্দির কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করতে ভুল করবেন না।  সুতরাং কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি একটি দর্শনীয় স্থান।

১০। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক (বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক) কক্সবাজার জেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই সাফারি পার্ক টি স্থাপন করে। এখানে হরিণ ছাড়াও বাঘ, সিংহ, ভালুক, জলহস্তী, গয়াল, হাতি, কুমিরসহ প্রভৃতি প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। এখানকার সাদা সিংহ পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে রয়েছে একাধিক পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিশ্রামাগার এবং ডরমেটরি। পর্যবেক্ষণ বা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পশু পাখিদের মুক্ত বিচরণ খুব সহজেই দেখা যায়। সুতরাং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত যাবার পথে অথবা ফিরে আসার পথে এক নজরে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটি ঘুরে নিতে পারেন।

সতর্কতা ও পরামর্শ

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান ঘুরে দেখার জন্য বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ জেনে পরিকল্পনা করুন। কোন হোটেলে থাকার জন্য, খাওয়ার জন্য আগে খাবারের মূল্য জেনে নেওয়ার পরামর্শ রইলো। তাছাড়া যে কোন যানবাহনে ওঠার পূর্বে ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বদা সতর্ক থাকার পরামর্শ রইলো।
আরো পড়ুন:

সর্বশেষ কথা - কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান

আমার দেশ আমার সম্পদ। আর যেকোনো পর্যটন স্থান আপনার আমার সম্পদ। তাই যেকোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ রইল। নিজে সচেতন থাকুন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। বন্ধুরা কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি এই কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান শিরোনামের লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url